সম্প্রতি ঘুরে এলাম দক্ষিন ইউরোপের ছোট্ট একটি দেশ গ্রিস থেকে। ভ্রমনপিপাসুদের কাছে গ্রিস খুব জনপ্রিয় জায়গা। এর অন্যতম কারণ হতে পারে ইতিহাসে ভরপুর সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো নগরী এথেন্স, অথবা নীল মুকুট মাথায় শ্বেত রঙা দ্বীপ সান্তরিনীর চোখ ধাঁধানো সোন্দর্য্য। আমাদের আট রাত,সাত দিনের লম্বা ভ্রমন মূলত এই নগর এবং দ্বীপকে কেন্দ্র করেই ছিল। চলে যাচ্ছি ভ্রমন বর্ননায়—-
ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে বরাবরের মতো সাথে থাকবার কথা ছিল দুই বন্ধু পরিবার—`রনি ভাই´ এবং `হাসান ভাই´পরিবার, সাথে যোগ হয়েছে সম্প্রতি ইউরোপে পিএইচডি করতে আসা আরেক বন্ধু `রিখিয়া পরিবার´। আমরা মোট চারটা পরিবার, রনি ভাইরা ছাড়া বাকি সবার ইউরোপের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে একত্র হবার কথা গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে, এখানে রনি ভাইরা গত এক মাস আগে আবাস গেড়ে বসেছেন উনার পিএইচডির এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের জন্য। আর আমরা এই সুযোগটা লুফে নিয়েছি মাত্র। বলে রাখি, আমাদের এথেন্সে যাওয়া উপলক্ষ্যে উনারা বেশ বড়সর দেখে তিন রুমের বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন যাতে সবাই আরাম করে থাকতে পারি।
আমাদের মিউনিখ থেকে যাত্রা শুরু করার কথা মার্চের বিশ তারিখ, বুধবার। রনি, মানে আমার বর মহাশয় অফিস থেকে ফিরলো একটা দুঃসংবাদ নিয়ে: অযাচিত কারনে হাসান ভাইরা আমাদের সাথে যোগ দিতে পারছেন না। দুঃসংবাদ বলছি কারন এই ট্যুরটা আমাদের অনেক দিনের ড্রিম প্ল্যান, হাসান ভাইরা বেলজিয়াম টু এথেন্স, এথেন্স টু সান্তরিনীর টিকেট, এমন কি সান্তরিনীতে হোটেল বুক করে ফেলেছেন। টিকেট এবং হোটেল বুকিং ক্যান্সেল করলেও উনাদের পক্ষে কোন টাকাই এখন ফেরত পাওয়া সম্ভব না। তাছাড়া বয়সের হিসেবে হাসান ভাইয়ের সহধর্মিণী মানে সেতু আর আমি এক হওয়ায় ওর সাথে আমার ভাব ভালবাসা খানিকটা বেশি, সেতু আসলো না মানে আমি কারো নাম ধরে ডাকবো সেই মানুষ রইলো না, গ্রুপের বাকি সবাই সম্পর্কে আমার আপু অথবা ভাইয়া।
তো যাই হোক, মন খারাপ নিয়ে আমরা এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা দিলাম সন্ধ্যা সাতটায় আর মনে মনে ভাবছিলাম না জানি আর কি দুঃসংবাদ আছে কপালে। ইতিমধ্যে খবর পেলাম মারুফ ভাইরা মানে রিখিয়া পরিবার ফ্লেন্সবুর্গ থেকে এথেন্সে পৌঁছে গেছেন।আমরা যাচ্ছি লুফথান্সা এয়ারলাইন্সে।আমাদের প্লেন ছাড়বে রাত ৯.৫৫ মিনিটে।আমরা সিকিউরিটি চেকিং শেষে লাগেজ জমা দিয়ে অপেক্ষা করছি বোর্ডিং পাসের জন্য।হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে,এই সময়ে বসে না থেকে বরের কাছ থেকে জেনে নিলাম লুফথান্সার টুকিটাকি তথ্য—
লুফথান্সা জার্মানির সবচেয়ে বৃহত্তম বিমান সংস্থা, আর সাবসিডিরিয়ারি গুলির সাথে মিলিত হলে এটা ইউরোপের মধ্যে বৃহত্তম বিমান সংস্থা। মজার তথ্য হলো এই এয়ারলাইন্স সাত থেকে আট ঘণ্টায় মিউনিখ থেকে দিল্লি পৌঁছে যায়। ইশ,যদি বাংলাদেশে অব্দি এই এয়ারলাইন্স যেত,অনেকটা সময় বেঁচে যেত আমাদের।
বোর্ডিং পাসের এখনো দেরি আছে,রনি বলল চেকিং এর কাছাকাছি জায়গায় গিয়ে বসতে।আমরা উঠে হাঁটা দিলাম, হাঁটতে হাঁটতে সামনে পড়লো ডিউটি ফ্রি শপ। রনিকে বললাম সময় তো আছেই, চলো ঢুঁ মেরে আসি। আমরা কেউই পারফিউম বা কসমেটিক্স ফ্রিক না, তারপরেও কসমেটিক্স দেখতে দেখতে কিভাবে সময় চলে গেল আল্লাহ মালুম। রনি ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ঘড়ির কাটা ৯.৩৫ ছুঁই ছুঁই। গেট ক্লোসিং ৯.৪০ মিনিটে,প্লেন ছাড়বে ৯.৫৫ মিনিটে। আমি তখনো জিনিস দেখায় ব্যস্ত। রনি আমাকে তাগাদা দিয়ে রীতিমত দৌড় দিলো, আমি হাঁটতে হাঁটতে ওর পেছনে পড়ে রইলাম আর শুনলাম মাইকে আমাদের নাম ভেসে আসতেছে “Akter & Roni, come to the gate number A8 as soon as possible”.
………….. চলবে